সোমবার, ১৭ মার্চ ২০২৫, ০৮:৫৮ অপরাহ্ন
কুলাউড়া প্রতিনিধি ঃ প্রতিদিনের মতো শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুর ১২টায় সিলেট থেকে নির্ধারিত সময়ে আন্তঃনগর জয়ন্তিকা ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্য ছেড়ে আসে। এসময় শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে জয়ন্তিকা ট্রেনে ১৯জন যাত্রী ওঠেন। ট্রেনটি কুলাউড়া জংশন স্টেশনের কাছাকাছি আসার পর ট্রেনের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিটিই মোশাররফ ওই যাত্রীদের কাছে টিকেট দেখতে চান। এতেই টিটিইর সঙ্গে ওই যাত্রীদের বাকবিতন্ডা বাধে। ট্রেনের টিটিই তাদের কাছে টিকিট দেখতে চাইলে টিকিট নাই দাবি করে তারা নিজেদের কখনো ছাত্র সমন্বয়ক, কখনো শিক্ষক, কখনো সাংবাদিক পরিচয় দেয়। এতে সন্দেহ হয় টিটিই’র। একপর্যায়ে টিটিই’র সঙ্গে অসদাচরণও করে নিজেদের ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দেন ওই যাত্রীরা। পরে টিটিই বিষয়টি রেলের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষসহ কুলাউড়া স্টেশন মাস্টার রোমান আহমদকে জানালে ট্রেনটি কুলাউড়ায় আসার পর ওই ১৯ যাত্রীর মধ্যে বিবেচনা করে ৮ জন যাত্রীকে টিকিট ছাড়া ভ্রমণের দায়ে টিকেটসহ ১ হাজার ৩ শত ৬০ টাকা জরিমানা করা হলে টিটিই’র কাছে তারা দুঃখপ্রকাশ করলে তাদেরকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এদিকে ট্রেনটি কুলাউড়ায় থামার পর রেলওয়ের গার্ড, টিটিই, স্টেশন মাস্টারের সাথে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয়দানকারী যাত্রীদের বাকবিতন্ডার কারণে জয়ন্তিকা ট্রেনটি প্রায় ৩০ মিনিট বিলম্বে কুলাউড়া থেকে যাত্রা করে।
কুলাউড়া রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো. রোমান আহমদ শনিবার রাত সাড়ে সাতটায় মুঠোফোনে বলেন, সিলেট থেকে ১৭জন যাত্রী বিনা টিকেটে ট্রেনে উঠেন। এসময় কর্তব্যরত টিকেট পরীক্ষক তাদের কাছে টিকেট আছে কিনা জানতে চাইলে বাকবিতন্ডা হয়। এসময় তারা নিজেদের কখনো ছাত্র সমন্বয়ক, কখনো শিক্ষক, কখনো সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে টিকেট না করে ট্রেন ভ্রমণের চেষ্টা করেন। পরবর্তীতে কুলাউড়া স্টেশনে ট্রেন থামলে তাদের জরিমানাসহ টিকেট করে ছেড়ে দেয়া হয়। এতে ট্রেন কুলাউড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে যেতে কিছুটা বিলম্ব হয়।
এ বিষয়ে জয়ন্তিকা ট্রেনের দায়িত্বপ্রাপ্ত টিকিট পরীক্ষক টিটিই মোশাররফ আলী শনিবার রাতে মুঠোফোনে বলেন, যাত্রীদের টিকেট চেকিংকালে ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দেয়া ১৭জন যাত্রী, ২জন শিক্ষকসহ মোট ১৯ জন যাত্রীর কাছে কোন টিকেট ছিলনা। এসময় একজন যাত্রী নিজেকে বরিশালে একটি বিশ^বিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক পরিচয় দেন। ওই শিক্ষকের বাড়ি নরসিংদী জেলায়। তারা নাকি শ্রীমঙ্গলে ঘুরতে এসেছেন। এসময় জরিমানাসহ টিকেট করতে বলায় তারা নিজেদের ছাত্র সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে অনেক কষ্ট করে তারা নাকি দেশ স্বাধীন করেছে। তারা কোন অবস্থায় টিকেট করবে না। তখন আমি তাদের বলি, দেশ স্বাধীনের সাথে টিকেট না করার কোন সম্পর্ক নেই। রাষ্ট্রীয় সম্পদ ট্রেন চড়লে টিকেট অবশ্যই করতে হবে বলায় তারা তর্কে জড়ায় এবং আমাকে শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করার চেষ্টা করে। এসময় ওই ঘটনার প্রমাণ ভিডিও ধারণ করতে চাইলে তারা আমার মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। বিষয়টি আমি রেলওয়ের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ, স্টেশন মাস্টার, রেলপুলিকে অবগত করার পর ট্রেনটি কুলাউড়ায় থামার পর স্টেশন মাস্টার, গার্ড, পুলিশ ওই ১৯জন যাত্রীকে টিকেট করার জন্য বলেন। পরে বিবেচনা করে ৮জন যাত্রীকে টিকেটসহ জরিমানা করার পর ট্রেন ছেড়ে যায়।
এদিকে ট্রেনের যাত্রী প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি এডভোকেট আনোয়ারুল ইসলাম ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর ফেসবুকে পোস্টে লিখেন, ছাত্র সমন্বয়করা কি নিজেদের সম্মান নষ্ট করার তালে আছে? কুলাউড়ায় ঢাকাগামী জয়ন্তিকা আধা ঘন্টার উপরে আটক! আজ ১৬ নভেম্বর, ২৪ ঢাকার উদ্দেশ্যে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে বিনা টিকেটে উঠে ১৭ জন পোলাপান, যাবে ঢাকায়। ট্রেনের কর্তব্যরত টিটিই তাদের কাছে টিকেট চাইলে তারা নিজেদেরকে ছাত্র সমন্বয়ক বলে পরিচয় দেয়। টিটিই সবিনয়ে অনুরোধ করেন স্ট্যান্ডিং টিকেট নেওয়ার জন্য। চলতি ট্রেনে এ নিয়ে বাদানুবাদ চলতে থাকে। টিটিই নাছোড়বান্দা, টিকেট করতেই হবে আর ছাত্র সমন্বয়ক নামধারীরা টিকেট করবেনা বলে অটল থাকে। ট্রেন এসে কুলাউড়া রেলস্টেশনে থামে। আমরা যথারীতি ট্রেনে উঠে নিজের আসনে বসে ট্রেন ছাড়ার অপেক্ষায় থাকি, কিন্তু ট্রেন তো ছাড়েনা। লোকজনের মুখে শুনি ট্রেন ছাত্র সমন্বয়করা আটকে দিয়েছে। ট্রেন থেকে নেমে গিয়ে দেখি সামনের বগির সামনে প্ল্যাটফর্মে বিশাল জটলা। বিষয়টি বুজার জন্য আমরা ক’জন জটলার মধ্যে যাই। দেখি রেলওয়ের গার্ড, টিটিই, স্টেশন মাস্টারসহ প্রায় শ’খানেক লোক। রেলওয়ের গার্ড ও টিটিই কঠোর অবস্থানে যায়। তারা বলে ১৭ জনের মধ্যে অন্তত ৮টা টিকেট করতেই হবে বিনা টিকেটের ১৭ জনকে। কিন্তু তাতেও সমন্বয়করা রাজি না। তারা ট্রেন আটক রাখে রেলের কর্তৃপক্ষের সবাইকে দেখে নেবার হুমকি দেয়। পরে ট্রেন কর্তৃপক্ষ রেল পুলিশ কল করে, পুলিশ আসে। গার্ড সিদ্ধান্ত নেয় আর কোন ছাড় নয়, ঢাকায় যেতে হলে পুরো ১৭ টাই স্টেন্ডিং টিকেট করতে হবে, নচেৎ এখান থেকে গাড়ী ছাড়বেনা আর বিনা টিকেটের যাত্রীদের বিরুদ্ধে রেলওয়ে আইনে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পরে অবস্থা বেগতিক দেখে সমন্বয়ক পরিচয়দানকারীরা পুরো ১৭ জনের জন্য স্ট্যান্ডিং টিকেট করতে বাধ্য হয়। পরে ট্রেনটি প্রায় ৪০ মিনিট বিলম্ব করে ঢাকার উদ্দেশ্যে কুলাউড়া স্টেশন ত্যাগ করে। ট্রেনের সাধারণ যাত্রীরা সমন্বয়কে বর্তমান সময়ের আচরণের বিরুদ্ধে যে প্রকার বিশ্রী সমালোচনা শুরু করলো তাতে খুবই কষ্ট লাগলো।